সঞ্জিত চন্দ্র শীল,হোসেনপুর(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আলুর বাম্পার ফলন হলেও সংরক্ষণ সংকটে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। কেননা বীজ আলু রাখার জায়গা মিলছে না স্থানীয় হিমাগার গুলোতে। ফলে বীজ আলু সংরক্ষণের জায়গা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। অনেকেই বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে শেড তৈরি করে সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। তাই ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরী প্রতিকার দাবি করেছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,এবার অনুকূল আবহাওয়ায় আলুর বাম্পার ফলনেও সংরক্ষণ সংকটে লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রতিটি কৃষককে। কেননা গত কয়েক বছর উৎপাদন মৌসুমে প্রতি মণ আলু ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার মূল্য কমে গিয়ে প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। অন্যদিকে হোসেনপুরের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণত উচ্চ ফলনশীল ডায়মন্ড ও এস্টারিক জাতের আলুর চাষ বেশি হয়। যা হিমাগারে সময়মত সংরক্ষণ না করলে কিছুদিন পরেই আলুতে পঁচন ধরে যায়। কৃষকদের ভাষ্যমতে, গত ফেব্রয়ারি মাসের শেষের দিকে যেসব আলু জমি থেকে তোলা হয়েছে তার বেশিরভাগই এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছে। ফলে সেগুলো বর্তমানে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতাধীন বিএডিসির আলু বীজে এ বছর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৪৮ একর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়। যার মধ্যে উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের চর জামাইল ব্লকেই বিএডিসির শতাধিক কৃষক ৭০-৮০ একর জমিতে আলু চাষ করে বাম্পার ফলনও পেয়েছেন। কিন্তু বিএডিসির এসব আলু বীজ স্থানীয় হিমাগার গুলোতে সংরক্ষণের জায়গা পাচ্ছেন না কৃষকরা। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার চর জামাইল এলাকার কৃষক মোঃ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আলুর বিশাল স্তুপ। তিনি জানান, এবার ২৪ একর জমিতে আলু চাষ করে ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে বিএডিসি থেকে ১৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন আর বাকী অর্ধেক টাকা তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু উৎপাদিত আলু বীজের গুণগত মান ভালো হওয়া সত্বেও হিমাগারে ১৫০ বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য ১৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে পাশের ‘পাকুন্দিয়া এগারোসিন্দুর হিমাগারে’ নিয়ে যান। সেখানে আলু রাখার জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নীচে রেখে দিয়েছেন। এতে অনেক আলু নষ্ট হচ্ছে। মূলত: কৃষকরা লাভের আশায় বিএডিসির অধীনে আলু চাষ করে সংরক্ষণ সংকটে এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে,কৃষকের কাছ থেকে বীজ আলু না নিয়ে প্রায় হাজার খানেক পাইকার ও মধ্যস্বত্বভোগীর কাছ থেকে বস্তা প্রতি গড়ে ৩০০টাকা অগ্রিম জামানত নিয়ে অনেক আগেই হিমাগার ব্লক করে ফেলেছেন কতৃপক্ষের কিছু অসাধু লোকজন।ইতিপূর্বে পাকুন্দিয়ার এগারোসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে আলু সংরক্ষণের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন টনক নড়েনি। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ,বৈধ পথে ওই দুই হিমাগারে তারা আলু সংরক্ষণ করতে না পারলেও কতিপয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার আলু কিনে পাকুন্দিয়া এলাকার কোল্ড স্টোরেজেই সংরক্ষণের করেছেন। অথচ স্থানীয় কৃষকরা হিমাগারে আলু রাখতে পারছেনা। ফলে কৃষকদের উৎপাদিত বীজ আলু বাড়ির আঙিনায় টিনের ছেলা ও ত্রিপল টাঙ্গিয়ে খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রির প্রহর গুনছেন।
উপজেলার জামাইল গ্রামের আদর্শ কৃষক নবী হোসেন জানান,চর জামাইল এলাকার আলুচাষি ফখরুল ইসলাম, আব্দুল আউয়ালসহ শতাধিক কৃষকের উৎপাদিত আলু এখন সংরক্ষণ সংকটে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। তাই কৃষকদের দাবি হোসেনপুরে সরকারিভাবে যেন একটি আধুনিক হিমাগার স্থাপন করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কুষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান,এ বছর হোসেনপুরে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।সে হিসেবে কমপক্ষে ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতার একটি হিমাগার প্রয়োজন।কিন্তু হোসেনপুরে কোনো হিমাগার না থাকায় প্রতিবছরই এ এলাকার কৃষকরা আলু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।
স্থানীয় হিমাগারের উপ-পরিচালক মোঃ হারুন অর রশিদ আলু সংরক্ষণে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বতভোগীদের সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান,তালিকাভুক্ত চাষীদের কাছ থেকে আগে আলু সংরক্ষণ করা হয়।পরে অন্যদের সুযোগ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের বিষযে কেহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :